প্রথম সেশন
“খুক খুক!” একটা কাশি দিয়ে কথা শুরু করে বুড়ো বটগাছ, “বন্ধুগণ! আজ একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে আমরা সবাই এখানে জড়ো হয়েছি।"
যারা এতক্ষণ উশখুশ করছিল তারা সবাই চুপ হয়ে যায়। খুব জরুরি নোটিশ দিয়ে পৃথিবীর সব জীবিত প্রাণীকে আজকের সভায় ডেকে আনা হয়েছে। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে গাছপালা, পোকা- মাকড়, হাতি-গণ্ডার সবাই আছে। তবে কেন সবাইকে ডাকা হয়েছে সেটা কেউ এখনো জানে না।
বটগাছ বলল, “বন্ধুগণ, আমাদের জীবিত প্রাণীদের মাঝে চরম বিশৃঙ্খলা। একজনের সঙ্গে আরেকজনের চরম হানাহানি। নিজেদের মাঝে ভালোবাসা নেই, সমন্বয় নেই। জলবায়ুর এতই পরিবর্তন হয়েছে যে যে কোনো মুহূর্তে পৃথিবীর প্রাণীজগত নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। আমরা কীভাবে নিজেদের রক্ষা করব সেই ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
হাতি বলল, “লাভ নাই। কেউ কারো কথা শুনবে না। সবাই নিজেদের মাঝে ঝগড়া ঝাটি করতে থাকবে।"
তেলাপোকা বলল, “আমাদের আসলে একজন নেতা দরকার। সবাই তাহলে সেই নেতার কথা শুনবে। " বানর বলল, “খাটি কথা। আমরা বানরেরা হলাম সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান, আমাদেরই তো নেতা হওয়া উচিত! এ নিয়ে এত আলোচনার কী আছে?"
সভায় যে মানুষটা ছিল, সে দাঁড়িয়ে বলল, "কিন্তু আমি জানতাম, আমরা মানুষেরা সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান।”
মানুষের কথা শেষ হতে না হতেই চারপাশ থেকে কিচমিচ, টিট্রিট, গড়গড়, কা কা, ঘেউ ঘেউ, ম্যাঁও ম্যাঁও করে সবাই প্রতিবাদ করে উঠে। সবাই বলতে থাকে, "কী বললে? মানুষ বুদ্ধিমান? মানুষ হচ্ছে সবচেয়ে বোকা। তাদের নির্বুদ্ধিতার কারণে পরিবেশের এই অবস্থা, তাদের কারণে আজ পৃথিবীর এত বড় সর্বনাশ!”
কথাটা সত্যি, মানুষটা ভাই তাড়াতাড়ি মাথা নিচু করে বসে পড়ল।
বানরটা বলল, "হ্যাঁ, যেটা বলছিলাম, সত্যিকারের বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে নেতা হওয়ার যোগ্যতা আছে। শুধু আমাদের"
বাঘ দাঁত খিঁচিয়ে বলল, “তোমার মতো নেতা হলে বনে আর আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু থাকবে না!” বট এবার বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলল, “আহহা! ঝগড়া বন্ধ করো তো দেখি। অন্যদের কথাও শুনি।" হঠাৎ একটা রিনরিনে কণ্ঠ ভেসে আসে, “আমি একটু কথা বলতে চাই..."
সবাই ডানে বামে তাকায়, কাউকেই দেখা যাচ্ছে না! সেই রিনরিনে গণা বলল, “আমাকে তোমরা দেখবে না। আমি ভাইরাস! আমাদের তুলনা শুধু আমরাই, তাই নেতা হলে আমাদেরই হওয়া উচিত! একেবারে জড়পদার্থের মতোই আমরা টিকে থাকি, কিন্তু তোমাদের কারও না কারো শরীরে ঢুকতে পারলেই আর আমাদের পায় কে? তখন একের পর এক কোষ দখল করে নিই জ্যান্ত প্রাণীর মতোই। মানুষেরাও আমাদের ভয়ে কাবু হয়ে যায়। এই তো কদিন আগেই আমাদের করোনা ভাইয়েরা মানুষদের একেবারে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে, সেটা ভুলে গেছ?"
সবাই হইচই করে উঠতেই আরেকটা অদৃশ্য কণ্ঠ সবাইকে থামিয়ে বলে ওঠে, "চেঁচামেচি করে লাভ নেই। ভাইরাস তো খুব ভুল কিছু বলে নি। প্রাণীরা সাইজে বড়সড় হলে কী হবে, ভেতরে ভেতরে সবাই তো ভীতুর ডিম! সাইজে তার থেকে বড় কিছু দেখলেই তো সব ঝেড়ে পালাও। আর আমার মতো ব্যাকটেরিয়াদের কথা ভাবো! আমাদের ভাইবোনেরা সব প্রাণীর ভেতরে আছে, এমনকি মানুষের পেটের ভেতরে, তাদের মুখের ভেতরে, ত্বকের নিচে রীতিমতো পাড়ামহল্লা বানিয়ে থাকে। কোনো প্রাণী টেরটাও পায় না! সেদিক দিয়ে দেখলে তোমাদের উচিৎ আমাদের ব্যাকটেরিয়াদেরকেই নেতা হিসেবে মেনে নেওয়া!”
“এত তর্কাতর্কি বন্ধ করো তো!” বিরক্ত গলায় বাঘ বলে ওঠে, "আজীবন বনের রাজা ছিল বাঘ, এখন দেখি সবার নেতা হওয়ার শখ হয়েছে। পারলে এসে মারামারি করো তো আমার সঙ্গে দেখি কে জেতে।” সভায় একটা চাপা গুঞ্জন শুরু হয়েছিল, বাঘের কথা শুনে সবাই একটু ভয় পেয়ে চুপ হয়ে যায়।
"এইবার একটু আমাদের কথাও শোনো" গাছের ডাল থেকে একটা পিঁপড়া বলতে শুরু করে, “তোমাদের সবার এই এক সমস্যা! খালি ঝগড়াঝাঁটি আর ঝগড়াঝাটি! আমরা পিঁপড়ারা মিলেমিশে কত কাজ করি, সেটা দেখে একটু শিখলেও তো পারো! মানুষ এত বড়াই করে নিজেদের নিয়ে, অথচ আমরা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রমী। বাঘের যে এত নেতা হওয়ার শখ, এক এলাকায় কয়েকটা বাঘ থাকলেই তো মারামারি শুরু হয়ে যায়, আর আমরা শত শত পিঁপড়া একসঙ্গে একটা পরিবারের মতো থাকি। মাটির নিচে আমরা যেভাবে শহর বানিয়ে থাকি, দেখলে তোমাদের সবার চোখ ট্যারা হয়ে যাবে!"
হুতুম প্যাঁচা অনেকক্ষণ ধরে বটগাছের কোটরে ঢুকে ঘুমানোর চেষ্টা করছিল। এত কথার আওয়াজে টিকতে না পেরে বাইরে এসে হাই তুলতে তুলতে বের হয়ে এসে বলল, "দ্যাখো অনেক হয়েছে! এবার একটু থেমে আমার কথা শোনো। তোমরা যে যা-ই বলছ, সবার কথাতেই যুক্তি আছে। কিন্তু একটা জিনিস কি জানো, তোমরা কিন্তু সবাই সবকিছু দেখো মাটিতে দাঁড়িয়ে। শত্রু একেবারে কয়েক হাতের মধ্যে চলে না এলে তোমরা টেরটাও পাও না! অথচ পাখিরা কিন্তু উপর থেকেই সব দ্যাখে। বিশেষ করে আমাদের মতো প্যাঁচারা আমরা একেবারে নিঃশব্দে রাতের আকাশে ঘুরে বেড়াই, কোথায় কী ঘটছে আমাদের চেয়ে বেশি কেউ জানেনা। তাই নেতা হলে আমাদেরই হওয়া উচিৎ, কোনো বিপদ আপদ এলে আমরাই সবার আগে টের পাব।"
প্যাঁচার কথা শেষ হতে না হতেই আবার সভায় একটা হইচই শুরু হয়ে যায়। বটগাছ একটু গলা খাঁকারি দিয়ে সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করল, তবে বিশেষ লাভ হলো না। হতাশ গলায় বট গাছ তখন নিজেই বলতে শুরু করে, “থামো তো সবাই! এই যে বাঘ, পিঁপড়া, প্যাঁচা সবাই এতক্ষণ ধরে এত বড় বড় কথা বলছ, তোমরা কেউই তো নিজে নিজে খাবারটাও তৈরি করতে পারো না। অন্য জীবকে মেরে খেতে হয় তোমাদের। নিজমুখে নিজের কথা বলতে একটু লজ্জাও লাগে, তাও না বলে পারছি না। আমরা তোমাদের মতো অন্য জীবদের খেয়ে বাঁচি না, বরং একটু রোদ, পানি, বাতাস পেলে নিজের খাবার নিজেই তৈরি করে নিই। তাই নেতা যদি কেউ হয় তাহলে গাছেদের মধ্য থেকেই কারও হওয়া উচিৎ.…
বট গাছ কথা শেষ করার আগেই সব জীব চিৎকার করতে থাকে, “স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত! মানি না! মানবো না!” সভায় প্রচণ্ড হইচই, গোলমাল।
তখন মানুষটা ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “তোমরা যদি অনুমতি দাও, তাহলে আমি একটা কথা বলতে পারি।"
ব্যাঙ বলল, “যা বলতে চাও তাড়াতাড়ি বলে ফেলো।"
মানুষ বলল, "আমরা মানুষেরা নেতা ঠিক করার জন্য একটা কাজ করি। সেটাকে বলে নির্বাচন। সবাই যদি গোপন ব্যালট দিয়ে একজন নেতা ঠিক করে ফেলি, সেটা হবে সবচেয়ে ভালো।"
টিকটিকি বলল, "ঠিক ঠিক ঠিক!” ব্যাঙ বলল, "নির্বাচন চাই! নির্বাচন!”
অন্য সব প্রাণীও বলল, "হ্যাঁ, হ্যাঁ। নির্বাচন করেই আমরা আমাদের নেতা ঠিক করব।"
তারপর জীব জগতে নির্বাচন নিয়ে মহা উত্তেজনা। চারিদিকে মিটিং মিছিল। পোস্টার, ফেস্টুন আর ব্যানারে সব ঢেকে গেল। শ্লোগানের শব্দে কেউ রাতে ঘুমাতে পারে না।
একদিন মহা ধূমধামে নির্বাচন হলো। রাত জেগে সবাই মিলে ভোট গুণতে শুরু করল। সবার ভেতরে উত্তেজনা, কে হবে বিজয়ী? কে হবে জীব জগতের নেতা?
একসময়য় ভোট গণনা শেষ হলো। দেখা গেল বিজয়ী হয়েছে
(দেখতেই পাচ্ছ গল্পটা এখানে শেষ হয়নি। এর পরে কী ঘটবে? কে জিতবে নির্বাচনে? আর তারপর? এই গল্পের পরের অংশে আর কী কী ঘটবে তা ঠিক করবে তোমরাই!)
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
নির্বাচনে জিতবে কে? | |
---|---|
সে কী ধরনের জীব? | |
তার সম্পর্কে কী কী জানো? সে কী না বা কো থাকে? | |
এই চরিত্রাটি কেন ভোটে জিতবে বলে তোমার মনে হলো ? |
দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সেশন
আগের সেশনে তোমরা তো গল্পটা নিয়ে আলাপ করলে। এখন একটু গল্পের সবগুলো চরিত্র খুঁটিয়ে দেখা যাক। আগের গল্পের মোট চরিত্র কয়টি এবং কোনটা কোন ধরনের জীব (উদ্ভিদ / প্রাণী/ অণুজীব) নিচে লিখে রাখো----
চরিত্রের নাম | কোন ধরনের জীব ? |
---|---|
পঞ্চম সেশন
দলের সদস্যদের নাম | দলীয় নাটকে যে ভূমিকা ছিল (অভিনয় করলে কোন চরিত্রে অভিনয় করেছে সেই নামসহ লেখো ) |
---|---|
ফিরে দেখা |
---|
সব দলের নাটক তো দেখলে, কোন গল্পটা তোমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে? কেন?
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
কাদের অভিনয় সবচেয়ে সুন্দর ছিল? আজকের অনুষ্ঠান নিয়ে তোমার অনুভূতি নিচে টুকে রাখো -
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
Read more